নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেল সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির দু’প্রান্তের কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ বাকি থকায় রেল সেতুটি চলতি বছরের(২০২৪ সাল) ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও উদ্বোধন হচ্ছে না। তবে আগামী বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বঙ্গবন্ধু সেতু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, মূল সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হলেও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতু পূর্ব প্রান্তে নতুন রেলস্টেশনের এবং সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেলস্টেশনের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছ।স্টেশন দুটির ঘষামাজা ও রংতুলির কাজ চলছে।
যার জন্য সেতিটি চলতি বছরের উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আগামী বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন,সেতুটি চালু হলে দেশের এই দীর্ঘতম রেলসেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেঁচে যাবে।
যমুনা রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্র জানা যায়, নির্মাণাধীন যমুনা রেলসেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে উদ্বোধনের ১ বছরে সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
এছাড়া সেতুটিতে ডবল লাইন থাকায় ক্রসিংয়ে পড়বে না কোন ট্রেন। এতে বর্তমাব যমুনা সেতুর চেয়ে রেলসেতুতে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
রেল প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে,২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়।
এতে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হলে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দাঁড়ায়।
এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। যা প্রকল্পের ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এই রেলসেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রেলসেতুর ২ পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি।বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করে। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।