‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেখে, নির্দেশনা নিয়ে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত’

অনলাইন ডেস্ক : অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের কারণ দেখে ও নির্দেশনা নিয়ে তারপর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ের কারণ দেখে ও নির্দেশনা নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাইকোর্টে নতুন করে শুরু হওয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের ওপর আজ রবিবার এ রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের পর আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তিনি জানান, সবার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। সবাইকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট জানান, মামলাগুলোর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ, কারণ তা অবৈধ উপায়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে বিচারিক আদালত এই রায় দিয়েছে।

হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো এভিডেনশিয়াল মূল্য নেই। এটি জোর করে নেওয়া হয়েছিল এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি।

এর আগে ২১ নভেম্বর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন (সিএভি) হাইকোর্ট। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২৩ অক্টোবর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির দপ্তর থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠানো হয়। এর পর ৩১ অক্টোবর হাইকোর্টের এই বেঞ্চ মামলার পেপারবুক পাঠের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের শুনানির মধ্য দিয়ে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েকশ নেতাকর্মী। ওই হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত মামলা দুটির রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালে এটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে, কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই মামলায় আলাদা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি শুরু করে।

তবে সরকার বদলের পর দ্বৈত বেঞ্চের একজন বিচারপতি পরিবর্তন হলে আপিল শুনানির বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১ অক্টোবর নতুন করে আবারও আপিলের শুনানি শুরু হয় নবগঠিত বেঞ্চে।-ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com