হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর কারাগারে

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:

বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার মামলার প্রধান আসামি কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় তাকে কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উপ-পুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, সাবেক এসপি তানভীর আরাফাত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা রয়েছে। কোথা থেকে কখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি পুলিশ।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আমার দলীয় ছোট ভাই বিএনপির সহযোদ্ধা সুজন মালিথা নিয়মিত বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহ প্রদান করতো।

যার কারণে আসামিদের কাছে সুজন মালিথা শত্রু হিসেবে পরিণত হয়। আসামিরা আমার দলীয় ছোট ভাইকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই জের ধরে আমার দলীয় ছোট ভাই সুজন মালিথা বিএনপির প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করলে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটে আসামিরা সকলে মিলে আমার দলীয় ছোট ভাইয়ের বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়।

পরবর্তী সময়ে আমিসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন তাকে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পারি, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উল্লেখিত আসামিরা পরস্পরের যোগসাজসে আমার দলীয় ছোট ভাই সুজন মালিথাকে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে।

অতপর আমিসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দেয়।
একাধিকবার উক্ত ঘটনার বিষয়ে মামলা করার চেষ্টা করলে আসামিরা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়।

ঘটনার বিষয়ে এলাকার অনেকেই অবগত আছেন। এমতাবস্থায় ঘটনার বিষয়ে সুজন মালিথার পরিবারসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থানায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া মডেল থানার সাবেক ওসি নাসির উদ্দিন, একই থানার সাবেক ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান, ওই থানার সাবেক এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা’সহ এই মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বিএনপি কর্মী সুজন হত্যা মামলায় তানভীর আরাফাতকে গ্রেফতার করে কুষ্টিয়া আনা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় তাকে কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।বর্তমানে তিনি জেলা কারাগারে আছেন।

প্রসঙ্গত: ২০১৮ সালে এসএম তানভীর আরাফাত কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে¡ নিয়োজিত ছিলেন।#এস.আর.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com