পুলিশ লাইনস স্কুল: অধ্যক্ষের চেয়ার দখল ও পুলিশকে ‘কিল-ঘুষি মারায়’ দুই মামলা

স্টাফ রিপোর্টার : তালা ভেঙে রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার দখল এবং পুলিশকে কিল-ঘুষি মারার অভিযোগে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটিতে প্রতিষ্ঠানটির অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পরিচালনা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে আওয়ামীপ্রীতির অভিযোগ সামনে আসে। তখন কয়েকজন শিক্ষক ও কিছু বহিরাগতদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতি দেয় আরএমপি।

সোমবার সকালে ড. গোলাম মাওলা তার অনুসারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে যান। একটি কাগজ দেখিয়ে জানান, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন। ফলে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ দাবি করেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে রাখে।

একপর্যায়ে ড. মাওলার অনুসারীরা তালা ভেঙে তাকে ভেতরে ঢোকান এবং অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দেন। দুপুরের পর পুলিশ যায়। তারা তালা ভেঙে ফেলার অভিযোগে কয়েকজনকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে কাউকে আটক না করেই ফিরে যায় পুলিশ। রাতে এ নিয়ে মামলা করা হয়।

রাজপাড়া থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আয়নাল হক। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১২ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন আরও ৪০-৫০ জন। এ মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে কিল-ঘুষি মারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে তালা ভেঙে অফিসে প্রবেশ এবং ড্রয়ারে থাকা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা চুরি করার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম।

শফিকুল ইসলামের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৯ জন। এ মামলাতেও অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলা, প্রতিষ্ঠানের সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মামুনুর রহমান, যুক্তিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মকবুল হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুন নেসা ও রসায়নের সহকারী অধ্যাপক মল্লিকা সমাদ্দারকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলা দুটিতে ড. গোলাম মাওলার ছেলে ঐহিককেও আসামি করা হয়েছে।

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, মামলা দুটির আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে মঙ্গলবার ও রাত আটটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

সোমবারের ঘটনার পর আরএমপি কমিশনার ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হাইকোর্ট শুধু একটা রুল জারি করেছেন যে কেন অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না। হাইকোর্ট তাকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন জবাব দিতে। এই সময়ের মধ্যে তিনি জবাব দেবেন। হাইকোর্টে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ড. মাওলা বহিরাগতদের নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন। এ ব্যাপারে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার ড. গোলাম মাওলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

আগের দিন সোমবার তিনি বলেছিলেন, হাইকোর্ট যেহেতু তার অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন, সেহেতু তিনিই এখন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। এ জন্যই তিনি কলেজে গিয়েছেন। মামলা হলে তিনি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন।

‘কলেজে বসতে না দিয়ে আদালত অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে’ দাবি করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমিও বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com