ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০: টেকসই ভবিষ্যতের প্রশস্ত পথ

 মো. মাসুদ আলম : সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্ব সুপরিচিত। তবে, সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কাঙ্খিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে আমাদের তেমন ভূমিকা না থাকলেও এর প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২২ এ বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা ২৭ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে প্রতিবছর দেশের কয়েক শত মিলিয়ন ডলার পরিমাণের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

সেই সাথে কৃষি উৎপাদন, পানি সরবরাহ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের তালিকার সাত নাম্বারে বাংলাদেশ অবস্থান। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৮৫টি বড় আকারের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। এগুলোতে প্রাণ হারিয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এই পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ বাধ্য হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সমন্বিতভাবে এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সরকার ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ নামক একটি বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে সক্ষম- এমন মানবসম্পদ গড়ে তোলা হবে। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও আইনী অবকাঠামোর সমন্বয়ে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনের জলবায়ুর সম্ভাব্য পরিবর্তন ও এর প্রভাবকে হিসেবে রেখে বদ্বীপ পরিকল্পনা বহুমাত্রিক লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একাধিক আইনি অবকাঠামো ও নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে কাজ করবে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান। দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় কী কী করণীয় সেটি নির্ধারণ করতে কাজ করছে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (২০২৩-২০৫০)। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর আওতায় নদীর পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য বাঁধ, লেভি ও অন্যান্য বন্যা নিয়ন্ত্রক অবকাঠামো নির্মাণ করে বন্যার ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে উপকূল বরাবর মজবুত রাস্তা নির্মাণ করা হবে, যাতে ঝড় কিংবা সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লেও যোগাযোগ বাধাগ্রস্থ না হয়। এ সকল অবকাঠামো জীবন ও জীবিকা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com