জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা

অনলাইন ডেস্ক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছয় বছর আগে জজ আদালত এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ বুধবার খালাসের রায় দেয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার।

পরে কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়াও এ মামলায় বাকি যে দুজনের সাজার রায় হয়েছিল, তাদেরও খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

তারা হলেন, হারিস চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

পরে আদালত চত্বরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “এই মামলার কোনো সাক্ষী বলে নাই যে বেগম খালেদা জিয়া এই ট্রাস্টের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যাহার করে কোনো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। এই রায়ে সারা দেশবাসী খুশি, আমরাও খুশি।”

আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, “আমরা সব সময় বলে এসেছি- ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন। এই মামলাটি ছিল পলিটিক্যালি মোটিভেটেড একটা কেস। যেখানে আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না।”

খালেদা জিয়াকে ‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে’ মামলাটি করা হয়েছিল অভিযোগ করে কায়সার কামাল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন, আর যারা তার প্রতি অবিচার করেছেন, তারা কিন্তু আজ দেশেই নেই। এই রায়ের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আমরা সন্তুষ্ট।”

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

 

আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। পরের বছর ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট। কিন্তু তখন আর শুনানি হয়নি।

দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান। এর পর থেকে ছয় মাস পরপর সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।

সে সময় বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং-১৮/২০১৭ এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হল।”

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দণ্ডের ‘মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম’ মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড ‘মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস’ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।

কিন্তু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারো দণ্ড (সেনটেন্স) বাতিল করলেও তিনি যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (কনভিকশন), সেই রায় বাতিল হয় না। আর আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

সে কারণে রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করার পরও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস চেয়ে নভেম্বরের শুরুতে হাই কোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করলেও খালেদা জিয়া চান আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসবেন। তাই আমরা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দ্রুত শুনানির জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেছি।”

এ মামলায় আপিল শুনানির জন্য গত ৩ নভেম্বর হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে নিজ খরচে পেপারবুক তৈরির অনুমতি দেয়।

এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি বুধবার হাই কোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে এবং শুনানি শেষে আদলত আপিল মঞ্জুর করে রায় দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com