নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন রূপ নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। ফলশ্রুতিতে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। তিনমাস পর কোটার বিরুদ্ধে স্লোগান উঠল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে।
তাদের এবারের স্লোগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ১৯৭৭ সালে রাবির উৎকালীন উপাচার্য আব্দুল বারী তাঁর ছেলেকে ভর্তির জন্য এই পোষ্য কোটা চালু করেছিলেন।
পরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও রাবিকে দেখে এ কোটা চালু করে। সরকারি চাকরিতে যৌক্তিক পর্যায়ে কোটা নির্ধারণের পর এবার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির এই পোষ্য কোটা বাতিলেরও দাবি তুলেছেন।
এ দাবির সুরে সায় দিয়ে বিদ্যমান পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি তুলেছেন জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমও।
শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পোষ্য কোটা’ নামক তেলা মাথায় তেল দেওয়া কালচার অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’
রাবিতে গতবছরের ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগে ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা সুবিধা পেয়েছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানেরা। এতে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অনেকে।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে রাবি শিক্ষার্থীরা এ কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। এ দাবিতে গত ৩১ অক্টোবর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ রাখা হয়। তবে সেটিও মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার সোচ্চার রয়েছেন এর বিরুদ্ধে। এর ফলে কর্তৃপক্ষ একটি রিভিউ কমিটি করেছে।
রিভিউ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বসেছে।
শিক্ষক সমিতি তো এই কোটা ৩ থেকে বাড়িয়ে আবার ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। না বাড়ালেও অন্তত ৩ শতাংশ বহাল রাখার দাবি তাদের।
তবে শুক্রবার কমিটির সভায় শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, পুরো কোটাই বাতিল করতে হবে। শনিবার সারাদিনের মধ্যে এ ঘোষণা না দিলে শুরু হবে কোটাবিরোধী আন্দোলন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ঘোষণা না দেওয়ায় রাত ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। শহীদ জ্জোহা চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে মিছিলে ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘তুমি কে আমি কে, মেধাবী মেধাবী’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’সহ নানা স্লোগান দেন।
মিছিলের শুরুতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার তাকে ‘মেরুদণ্ডসম্পন্ন শিক্ষক’ অ্যাখা দিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন মেরুদণ্ডসম্পন্ন শিক্ষক চাই।’
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমাদের অধিকার আমরা আদায় করে নিতে পারি, আমরা অধিকার আদায় করে নেব। পোষ্য কোটা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। এটা নিয়ে কঠোর আন্দোলন হবে।’
আম্মার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে এখানে ফ্যাসিবাদের দোসর ৭০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। পোষ্য কোটা বাতিল করলে তারা আন্দোলনে যাবেন।
আমরা বলতে চাই, এই ক্যাম্পাসে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। আমরা তাদের মোকাবিলা করব।’
তিনি বলেন, ‘যে কর্মচারীরা পোষ্য কোটার পক্ষে, তাদের নিয়োগ কীভাবে হয়েছে সেটাই দেখা হবে। খেলা হবে। খেলা শুধুমাত্র শুরু। এই আন্দোলনে আমরা মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক চিহ্নিত করতে সক্ষম হব।’
শনিবারের কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া রোববার তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে কোটার প্রতিবাদ জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
পোষ্য কোটা ইস্যুতে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারাক্ষণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে থাকা এই অধ্যাপক গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
এরপর পোষ্য কোটা নিয়ে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পোষ্য কোটা চান।
শিক্ষার্থীরা তা চান না। দুইপক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করে মাঝে থাকা আমাকে চাপ দিচ্ছে। একটা চাপ অনুভব করছি, প্রবল চাপ সেটা।’