রাজশাহীতে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য, সর. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা: নিরব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ! 

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষানগরী রাজশাহীতে শিক্ষাকে সেবা থেকে ব্যবসায় পরিনত করে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সরকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও এখন এই কোচিং বাণিজ্যে নিয়োজিত।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার চলছে, তারমধ্য সবচেয়ে বেশি কোচিং সেন্টার চলছে কাদিরগঞ্জ এলাকায়।

রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বেশি কোচিং সেন্টার দেখা যায়। ৩/৪ তালা বাসা ভাড়া নিয়ে একই বিল্ডিং-এ প্রতিটা ফ্লোরে আলাদা আলাদা নামের কোচিং দেখা যায়।

বছরের শুরুতে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতিযোগিতায় আকর্ষনীয় প্রচারপ্রত্র নিয়ে কোচিং সেন্টারগুলো জোরদার প্রচার প্রচারনা শুরু করেছে।

এই প্রতিযোগিতায় সরকারী স্কুলের শিক্ষকরাও থেমে নাই। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও কোচিং বাণিজ্যকে বৈধ মনে করেন।

আর এর পিছনে মুল সমস্যা হলো আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থার উদাসীনতা আর অবহেলা।

হেলেনাবাদ সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমানের কোচিং “বাংলা বাতিঘর” চাকচিক্য গ্লোসি পেপারে প্রচারপত্র ছাপিয়ে ১ নভেম্বর থেকে ভর্তি শুরু করেছে।

৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি নিজেই ব্যাচ করে পড়ান। প্রচার পত্রে তার কোচিংএর ব্যাচ সংখ্যা ২১ টা। প্রতি ব্যাচে জনপ্রতি শিক্ষার্থীর কাছে কোর্স ফি ৮ /৯ হাজার টাকা।

অবৈধভাবে কোচিং সেন্টার চালানোর বিষয় নিয়ে শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন তিনি অন্যায় করছেন।

সেই সাথে তিনি বলেন “সরকারী হাসপাতালে চাকরী করে ডাক্তাররা যদি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রুগী দেখতে পারে তাহলে আমরা কেনো পারবো না, আমরা তো চুরি করছি না”।

বাংলা বাতিঘরের কোন ট্রেড লাইসেন্স আছে কি জানতে চাইলে তিনি জানান তার কোচিং এর কোন ট্রেড লাইসেন্স নাই।

একই এলাকায় “বাংলা মন্জুষা” নামের কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক দীলিপ কুমার।

দীলিপ কুমার মাধ্যমিকের শিক্ষক তিনিও তার কোচিং সেন্টারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী পড়ান।

তার কোচিং সেন্টারের স্টাফদের দেয়া তথ্য মতে ব্যাচ সংখ্যা ১২ টা প্রতি ব্যাচে ৫০/৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পড়ান। তিনি নিজেই ক্লাশ নেন স্টাফরা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাজ গুলো করে।

কোচিং সেন্টার চালানোর বিষয় নিয়ে তার সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দেন তার কোচিং সেন্টারে।

অবৈধভাবে কোচিং সেন্টারের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোচিং সেন্টার চালাতে পারেননা বললেও পরে বলে কিছু ক্ষেত্রে কোচিং করার অনুমতি আছে তবে কোন ক্ষেত্রে কোচিংএর অনুমতি আছে সেটা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন আমি মাধ্যমিকের শিক্ষক আমার কোচিং-এ উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পড়ানো হয়। তবে তার সাদা কাগজের প্রচারপত্রে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে তথ্য দেয়া আছে, এবং তিনি স্কুলের মাধ্যমিকের শিক্ষক।

স্কুল সুত্রে জানা যায় দিলীপ কুমার পড়াশোনা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ে, স্কুলে নিয়োগ নেন হিন্দু ধর্ম শিক্ষক হিসেবে পরবর্তীতে সংস্কৃতিতে বাংলা ৩০০ নম্বরের বিষয় থাকায় তাকে বাংলার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

তার চাকরি সম্প্রতি সময়ে সরকারী হয়েছে তবে তিনি সরকারী ভাবে এখনও বেতন পান না, স্কুল থেকে কিছু সম্মানি পান ।

তবে কোচিং বাণিজ্য করেই তিনি গড়ে তুলেছেন দুইটা বাড়ি। একটায় বসবাস করে আরেকটি কয়েকজন শিক্ষক মিলে যৌথ মালিকানায় নির্মানাধীন।

জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার ভাই একই প্রতিষ্ঠানের রসায়নের প্রভাষক ইন্দ্রজিৎ সরকার জড়িত। (যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হবে)

স্ত্রীর নামে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স করে নিজেই কোচিং পরিচালনা করেন দীলিপ কুমার। কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের পর থেকে দীলিপ কুমার বিভিন্ন মহলে তদবির করেন যেন তার নামে সংবাদ প্রকাশ না করা হয়।

কোচিং বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জানান ” সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য করার বিধান নাই ” তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং করে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোন শিক্ষক কোচিং করে সেটা আমার জানা নাই তবে আমি জানলে তাকে সতর্ক করে দিবো “।

সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার করতে পারবে কি না জানতে চাইলে আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.শরমিন ফেরদৌস বলেন “না পারবে না, কোন শিক্ষক কোচিং করতে পারবে না বিধানে নেই “।

শহরের মধ্যেই কোচিং সেন্টার চালাচ্ছে আপনারা কেনো সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ” আমদের কাছে সঠিক কোন তথ্য নাই কোন শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালাচ্ছে, তাই আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনা।

কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে আমি তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com