নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ ও চিকিৎসা সেবার কার্যক্রমে ফিরিয়ে এসেছে খুশি রোগী ও রোগীর স্বজনরা। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তিকালীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাগমারার কৃতি সন্তান সাবকে খাদ্য মন্ত্রী মরহুম সরদার আমজাদ হোসেন ও বাগমারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরহুম নুরুল ইসলামের সহযোগীতায় ১৯৭২ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ১৯১৪ সালে ৩১ শর্য্যা থেকে ৫০ শর্য্যার উন্নতি হয়েছে।
৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও পরবর্তিকালীন সময়ে জনবল সংকট চলছে। তবে জনবল সংকট নিয়েই মানসম্মত চিকিৎসা ও চিকিৎসার গুনগত মানে এলাকার লোকজন সেবাই খুশি। প্রতিনিয়তই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলার দরিদ্র, অবহেলিত মানুষেরা আস্থা দিন দিন বাড়ছে। এক সময়ে যে রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, বর্হিবিভাগে ঔষুধ কম দেওয়া, রোগীদের সাথে চিকিৎসকদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে মানুষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে চাইতো না। কিন্তু পূর্বের তুলনায় চিকিৎসা সেবা ভালো হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিগত বছর গুলো স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। কিন্ত গত ৬/৭ বছর ধরে বেশ ভালো কার্যক্রম চলে আসছে। বর্তমানে নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডাঃ সাফিউল্লাহ নেওয়াজ। তিনি এই হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চিকিৎসা সেবার রকম বদলে যেতে শুরু করেছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যাপক সমস্যা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। একই সাথে জনবল সংকট থাকায় অনেকটা চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয় বলে জানান তিনি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে দেখতে পাওয়া যায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে প্রায় ৫৫ এর অধিক। এত রোগীর চাপ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে তাই নিতে হচ্ছে বাড়তি দায়িত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী জানান ৩১ শর্য্যা হাসপাতাল ৫০ শর্য্যায় উন্নত করা হলেও ৩১ শর্য্যার মত জনবল ও কিছু আউট সোর্সং এর লোক দিয়ে সেবা কাজ চলছে। ৬৯ জন কর্মচারীর স্থলে ৪১ জন রয়েছে। অনেককে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় পরিমিত লোক না থাকায়। ২২ জন ডাক্তারের স্থলে ১৫ জন, ৩০ জন নার্স এর স্থলে ২৮ জন। এছাড়া উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকর্মী ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ শূণ্য রয়েছে। কনসালটেন্ট সংখ্যা বাড়ানো হলে সেবার মান বাড়বে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। চিকিৎসা সেবা ভালো হওয়ার কারণে রোগী বেড়ে যাওয়ায় এখানে লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন বলে ভূক্তভোগী রোগীরা মনে করছেন।
জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ভিতরে রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য নরমাল ডেলিভারী এবং নরমাল ডেলিভারীল পাশাপাশি সিজারে ঝুকিঁপূর্ণ মায়েদের জন্য ডেলিভারির ব্যবস্থা। বিনামূল্যে চক্ষু সেবা, যক্ষা ও কুষ্ট রোগীদের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষুধ প্রদান। রয়েছে ব্লাড টেষ্ট, এক্সরে, ইসিজি, আলটাসনোগ্রাফি করার ব্যাবস্থা । মহিলাদের জন্য রয়েছে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার শনাক্তকরণে আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন একান্ত প্রয়োজন বলে অনেকে দাবি করেছেন।
বালানগর গ্রামের আব্দুল মতিন তার ছেলে আব্দুল্লাহ আর মুসাকে নিয়ে দুদি’ন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। তিনি জানান, চিকিৎসা সেবা ভালো হয়েছে। একই ভাবে গোয়ালকান্দি গ্রামের রকি বিষ পানে অসুস্থ হওয়ায় তাকে তার পরিবারের লোকজন চিকিৎসা দিতে এনে অনেকটা সুস্থ হয়েছে বলে জানান। রকির মা জানান, এখানে ভর্তি হওয়া আজকে ৩ দিন হয়ে গেলো এবং এখানে ভর্তি হওয়ার পরে দেখতে পেলাম যে সত্যিই এখানে চিকিৎসা সেবা অনেক ভালো। এই হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা আমাদের ভালো চিকিৎসা দিচ্ছে। এই হাসাপাতাল মোটামুটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বেশ আছে। আমি এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট”।
হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন উপজেলার তাকিপুর গ্রামের আফসার আলী ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। তার কাছে চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন. ভালো চিকিৎসায় তার পেটফাপা রোগ অনেকটা আরাম হয়েছে।
হাসপাতালটিতে সরজমিনে বর্হিবিভাগে গেলে সেখানে দেখা যায় ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে সাধারণ রোগীদের বাড়তি সিরিয়াল। রোগীদের লম্বা লাইন হাসপাতালের গেট পর্যন্ত ঠেকে গেছে। জানা যায় এই বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ জন মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। রোগের ধরন অনুযায়ী এখানে ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসক দিয়ে চলে চিকিৎসা সেবা ও অভিজ্ঞ চিকিৎকসদের কাছে থেকে প্রেসক্রিপশন এবং হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে কয়েক ধরণের ঔষুধ দেওয়া হচ্ছে এই বর্হিবিভাগে। সিরিয়ালে দাড়াঁনো আরো কয়েকজন সেবা গ্রহিতাদের সাথে কথা বললে তারাও জানান এই হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারি ঔষুধ পরিমিত দেওয়া হয় তাই এই হাসপতালের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইরকম ভাবে চিকিৎসা সেবা অব্যহত থাকুক এবং এই হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধির দাবি করেন চিকিৎসা নিতে আসা সেবা গ্রহিতারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাফিউল্লাহ নেওয়াজ জানান, আমি হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করছি। সব কিছু সামলাতে এখানকার চিকিৎসা সেবা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেটি নিয়ে আমি পরিকল্পনা করছি। জনবল সংকট পুরনের জন্য যথাযথ ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দুর্বল নেটওয়ার্কে চিকিৎসা সেবাও কিছুটা ব্যাহত হয় বলে তিনি জানান। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করতে চাই, বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাবতীয় উন্নতিকরণ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার।